,

সেই শিশুটির হাতে খেলনা তুলে দিলেন ইউএনও

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার মারকাযুল কোরআন ইসলামিক একাডেমিতে শিক্ষকের হাতে বেদম মারধরের শিকার শিশুটির বাসায় গিয়ে তাকে দেখে এসেছেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমিন। শিশুটির জন্য খেলনাও নিয়ে যান ইউএনও।

এরআগে মারকাযুল কোরআন ইসলামিক একাডেমিতে এক শিশুকে বেদম মারধরের একটি ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এরপর শিশুটিকে মারধর করা শিক্ষক ইয়াহিয়াকে মাদরাসা থেকে বরখাস্ত করা হয়। ইউএনও রুহুল আমিনের নেতৃত্বে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার দিকে মাদরাসা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।

রুহুল আমিন বলেন, ওই শিক্ষক ইয়াহিয়াকে মাদরাসা থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। রাতেই হাটহাজারী মাদরাসা থেকে তিনি রাঙ্গুনিয়া চলে গেছেন।

তিনি আরও বলেন, নির্যাতনের শিকার শিশুটির বাবা-মা অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নিতে চাওয়ায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন ও আমার পক্ষ থেকে মামলার খরচ চালানোর কথা বললেও তারা তাতে রাজি হয়নি। এমনকি তারা একটি আবেদনে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার কথা বলেন। শিশুর মা-বাবা বলেন, আল্লাহ বিচার করবেন। যেহেতু শিশুটির মা-বাবা ব্যবস্থা নিতে লিখিতভাবে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন তাই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান ইউএনও।

জানা গেছে, মঙ্গলবার শিশুটির মা-বাবা তার সঙ্গে দেখা করতে মাদরাসায় যায়। বিকেল ৫টার দিকে ফিরে আসার সময় সেও মা-বাবার পেছন পেছন যায়। এরপর শিক্ষক ইয়াহিয়া সেখান থেকে ইয়াসিনকে ধরে এনে পেটাতে শুরু করে।

পরে শিশুটির মা-বাবা উপস্থিত হয়ে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন না বলে লিখিতভাবে জানান। শিশুটির মা-বাবা লিখিতভাবে বলেন, কাজটি নিন্দনীয় ও এ ঘটনায় তারা মর্মাহত। তারপরেও সন্তানের শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেবেন না তারা। হাফেজ ইয়াহিয়া চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সাফরভাটা গ্রামের মোহাম্মদ ইউনুসের ছেলে।

এ দিকে ভাইরাল হওয়া ৩২ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা গেছে, রাস্তা থেকে শিশুটিকে ধরে নিয়ে যান ইয়াহিয়া। পরে মাদরাসার ভেতরে নিয়েও পেটাতে থাকে। শিশুটির চিৎকারেও তার মন গলেনি। ইয়াহিয়া পেটাতে পেটাতে বলতে থাকেন আর বের হবি! ভিডিওটি দেখে বিস্ময় প্রকাশ করছে মানুষ।

এরপর বুধবার সকালে শিশুটির বাড়িতে গিয়ে তাকে খেলনা দিয়ে আসেন ইউএনও। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে সে কথা জানিয়েছেন ইউএনও রুহুল আমিন।

স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ৮ বছরের ইয়াসিনের গতকাল জন্মদিন ছিল। আজ সকালে জানার পরে খেলনা উপহার নিয়ে গেলাম বাসায়। জিজ্ঞাসা করলাম খেলনা পছন্দ হয়েছে? ছেলেটির ঝটপট উত্তর- খেলনা পছন্দ হয়েছে। আরও দুইটা জিনিস আমার পছন্দ।
আমি জিজ্ঞাস করলাম কী কী? গুল্লি (খেলনা বন্দুক) এবং নিমোট (রিমোট) গাড়ি। আচ্ছা রাতে কিনে নিয়া আসবো? তাহলে দুইটা করে আনবেন। দুইটা করে কেন? আমার ছোট ভাইয়ের জন্যও আনবেন। আচ্ছা।
ছেলেটার শরীরের ব্যথা নয় মনের ব্যথা কমানোর চেষ্টা করছি, শরীরের ব্যথা হয়তো নাপা খেলেই সেরে যাবে। ইয়াসিন দ্রুত ভুলে যাক এই জন্মদিনের স্মৃতি।

এই বিভাগের আরও খবর